1. i@shahitterkagojbrammaputro.online : সাহিত্যের কাগজ ব্রহ্মপুত্র : সাহিত্যের কাগজ ব্রহ্মপুত্র
  2. info@www.shahitterkagojbrammaputro.online : সাহিত্যের কাগজ ব্রহ্মপুত্র :
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০২:৪১ অপরাহ্ন

জলছাপ – মনিরুজ্জামান বাদল (পর্ব তিন)

  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৪৪ বার পড়া হয়েছে

তিন

জলছাপ – মনিরুজ্জামান বাদল

গভীর প্রেম মানুষকে বোকা বানিয়ে দেয়, যখন যা শুনে তাই গ বিশ্বাস করে। চৌধুরীর আজ খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। কম্বলের ভিতর থেকে কিছুক্ষণ পরপর মাথা বের করে টেবিল ঘড়িটার দিকে লক্ষ্য রাখছে, কখন আটটা বাজবে। নুরী এসে পাশে শুবে মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে। নুরীকে ভালোবেসে চৌধুরী অন্ধ হয়ে গেছে। শহরে থাকা তাঁর অর্থ সেঞ্চুরি বয়সী বৌটাকে ভুলেই থাকে। হঠাৎ টুং টাং আওয়াজ শুনে চৌধুরী চমকে উঠলেন। কম্বলের ভিতরে থেকেই গম্ভীর গলায় বললেন, নুরী আসছো?

: জ্বী স্যার।

: কি করো?

: চুলায় চায়ের পানি গরম দিচ্ছি।

: আগে এদিকে আসো, দেখো তো আমার ঘাড়ের পেছনের অংশে এত ব্যথা করছে কেন?

: আসছি।

নুরী প্রায় আধাঘন্টার মত খাঁটি সরিষার তৈল হাতে নিয়ে মালিশ করে দিলো।

চৌধুরী এদিক ওদিক মাথা কাত করে ফুটিয়ে নিলেন আর বললেন বাবারে- এতক্ষণ কি যে একটা তীব্র যন্ত্রণার মধ্যে ছিলাম। এখন অনেকটাই আরাম পাচ্ছি বলে নুরীকে কম্বলের নিচে ঢুকিয়ে নিয়ে টিভির সাউন্ডটা বাড়িয়ে দিলেন। নুরী পোষা বিড়ালের মত চৌধুরীর বিশালবুকের উপর মাথা রেখে নিজেকে পরম সুখে উৎস্বর্গ করলেন। প্রেমের ক্ষমতা যে কি প্রচন্ড হতে পারে প্রেমে না পড়লে তা বুঝা যায়না। চৌধুরীর বয়স ষাটের উপরে। তাঁর তো এই সময় এত যৌনচাহিদা থাকার কথা না, তবে কি চৌধুরীর বেলায় ব্যতিক্রম ঘটছে? সব পুরুষেরই নাকি শেষ বয়সে মনে নতুন যৌবন দেখা দিয়ে যায়, তাহলে কি চৌধুরীর বেলায় এমন কিছু ঘটছে। নুরী চৌধুরীর বাইরে অন্য কাউকে নিয়ে ভাববেতো দূরের কথা কল্পনাও করতে পারেনা। তাঁর প্রবাস জীবনেও শতাধিক যুবক তাঁকে অবলীলায় ভোগ করে গেছে, কেউ এতটা স্থান পায়নি মনের ভিতর, চৌধুরী যতটা পেয়েছে। মায়ের সাথেও বিষয়টি শেয়ার করেছেন, মা তেমন কোন বাধা দেয়নি বরং মনে মনে খুশিই হয়েছে। কিছু সংখ্যক নারীরা যে টাকার কাছে হেরে যায় এটা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। নুরীর মায়ের জন্য মাসিক একটা এ্যমাউন্ট চৌধুরী মনে মনে প্রতিমাসেই রেখে দেয় সেটা নুরী পাঠাতে ভুলে গেলেও চৌধুরী বিকাশ করতে ভুলে না। নুরীর এখানে চাকুরির বয়স চলে প্রায় তিন বছর। এই তিন বছরে তাঁরা দুজনে স্বামী স্ত্রীর মত কত হাজার বার ঝগড়া করেছেন তাঁর কোনো হিসাব নেই। অবশ্যই এর জন্য নুরী দায়ী। নুরীর চাওয়া চৌধুরী তাঁকে সবসময় ভালোবেসে আগলে রাখুক, সেটা চৌধুরীর পক্ষে সবসময়ই হয়ে ওঠেনা। প্রতিষ্ঠানের কাজের চাপে মাঝেমধ্যে দুপুরের খাবারের কথা ভুলে যান, নুরী খেতে ডাকলে, যদি বলে পরে যাবো তুমি খেয়ে নাও ওইদিন সারাদিনের জন্য নুরী খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। নুরী এতটাই আবেগঘন একটা মেয়ে, যাকে নিয়ন্ত্রণ করে চলা চৌধুরীর জন্য কষ্টসাধ্য। মেয়েদের মন পৃথিবীর সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গা। এই মন অনেক কঠিন বিষয় সহজে মেনে নেয়, আবার অনেক সহজ বিষয় সহজে মেনে

 

মিতে পারেনা। চৌধুরীর কিছু আচরণ নুরীর মেনে নিতে কষ্ট হয়, নীরবে

আতে অরিয়ে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। নুরী মন খারাপ করে থাকলে তাঁকে খুব বিশ্রী দেখায়, সুন্দরী মেয়েরা কাঁদলে খুব সুন্দর দেখায় কিন্তু নূরীর বেলায় তাঁর পুরোপুরি উল্টো। নুরী অল্পতের রেগে যায়, চৌধুরী বেঁকে  বসলেই কাপড়-চোপড় গুছিয়ে বাসে উঠে পড়ে। পরে অবশ্যই

আলেমেয়ের বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে আসেনতে মাঝে-মধ্যে নুরী নিজেকে সামলে না রাখতে পারলে ঘুমের আমেন দয়োরে তিন দিন অফিসে না এসে তাঁর অভাবটা চৌধুরীকে বুঝানোর চেষ্টা করেন। নুরী আজ বাসায় গিয়ে তাই করেছেন। পরদিন সকালে চৌধুরী নুরীকে বারবার ফোন করছে কিন্তু নুরী রিসিভ করছে না। অফিস পিয়ন আসিফ কে নুরীর বাসায় পাঠানো হলো, আসিফ দেখলো নুরী ঘুমের মধ্যে পরনের কাপড়-চোপড় সব খুলে কম্বল বুকে জড়িয়ে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। আসিফ নুরীর মাথায় হাত বুলিয়ে তাঁকে জাগানোর অপচেষ্টা চালালেন কিন্তু কোন কাজ হলো না, বিষয়টি চৌধুরীকে জানিয়ে দিলেন। চৌধুরী জরুরি কাজে ঢাকায় অফিস করছেন। সপ্তাহে তিন দিন ঢাকায় অফিস করতে হয় নয়লে অফিস কর্মকর্তা কর্মচারী কাজে ফাঁকি দেয়। এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে চৌধুরী এখন অফিস করছেন মাঝেমধ্যে নুরী কে ফোনে ট্রাই করছেন, কিন্তু নুরীর ঘুম ভাঙছে না। অবশেষে রাকিব সাহেবকে ফোন করে নুরীর বাসায় পাঠালো। রাকিব সাহেব নুরীকে অর্ধ নগ্ন দেখে আসিফকে দিয়ে ওর সেলোয়ার-কামিজ ঠিক করে নিয়ে নুরীকে হাসপাতালে নেওয়ার বিষয়টি চৌধুরীকে জানান, চৌধুরী উপসম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কথা বলে নুরীকে সেখানে ভর্তি করানোর জন্য রাকিব কে সিএনজি করে নিয়ে যেতে বললেন। নুরীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো। একঘন্টা পর নুরী কিছুটা সুস্থ হলো। চৌধুরী আবার নুরীকে ফোন করে কথা বলতে লাগলো। নুরী সর্বস্ব হারিয়ে যাওয়া ব্যর্থ প্রেমিকার মত ওর বুকের জমাট বাঁধা কষ্টগুলোকে উগলে বের করে দিয়ে চৌধুরীর মুখ বরাবর ছুড়ে দিলেন। বাকরুদ্ধ চৌধুরী পরিস্থিতি সামলে নিতে নুরীর সকল আবদার হাসিমুখে মেনে হাজার বার সরি বললেন আর বললেন, লক্ষ্মীটি আর কখনো এমন হবে না। তুমি পাগলামি না করে স্বাভাবিকে ফিরে আসো। অফিস করো, আমি আগামীকাল আসছি। এখন এত কথা অফিসে বলা সম্ভব হচ্ছে না। আমি রাকিব সাহেবকে বলে দিচ্ছি।

শেয়ার করুন

আরো পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
Theme Customized By BreakingNews