1. i@shahitterkagojbrammaputro.online : সাহিত্যের কাগজ ব্রহ্মপুত্র : সাহিত্যের কাগজ ব্রহ্মপুত্র
  2. info@www.shahitterkagojbrammaputro.online : সাহিত্যের কাগজ ব্রহ্মপুত্র :
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬:১২ অপরাহ্ন

বইমেলা ও সাহিত্য আলোচনা- মনিরুজ্জামান বাদল

  • প্রকাশিত: সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৫৮ বার পড়া হয়েছে

পিটাইলে পিটুক,না পিটাইলে গোসল করতে গেলাম। গল্পটা অনেক পুরোনোদের মুখে শুনেছিলাম। তৎকালীন সময়ে কোন একজন কৃষক নাকি খুব খিটখিটে মেজাজের ছিলেন ক্ষেতখামার থেকে হালচাষ করে এসেই নাকি বৌ পেটাতো। হঠাৎ একদিন বৌ পেটাতে ভুলে যায় কৃষক! বৌ সাবান, মগ নিয়ে বসে অপেক্ষা করতে করতে একসময় কৃষক স্বামীকে মনে করিয়ে দিয়ে বলে উঠেন– পিটলে পিটুক, না পিটলে গোসল দিতে গেলাম। কথাটা বললাম,এইজন্যই গত একমাস হয়ে গেলো বইমেলার বয়স। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আরও দুই দিন বাড়িয়ে ২৯ শে ফেব্রুয়ারিকে ৩১ শে ফেব্রুয়ারি বানিয়ে ফেললো এরপরও যদি পাঠকদের বোধগম্য ফিরে না আসে তাহলে বাধ্য হয়েই বলতে হয় বই কিনলে কিনুন, না কিনলে পাটি,মাদুর গুছাইলাম। আর অপেক্ষা করার সময় নেই,এখন পাটি, চাটাই গুছিয়ে বাংলাবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে হবে। বইমেলা কোন পর্যটক কেন্দ্র নয়। জুটি বেঁধে ঘুরতে গেলাম আর একটু ফুঁচকা,চা,কফি,পাটিসাপটা পিঠা খেয়ে শূন্য হাতে চলে আসলাম। এটা হওয়া উচিত নয়। এখনো সময় আছে প্রত্যেকেই বই কিনুন, বই পড়ুন। বইমেলা নিয়ে দুটি কথা না বললেই নয়। অমর একুশে বইমেলা নতুন আগমনী বার্তা নিয়ে এসেছিল ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির এক তারিখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। দশমাস দশদিন অপেক্ষায় থাকার যেমন নিঃসন্তান মাতৃ কোলে বংশের বাতি হয়ে আসে পুত্র সন্তান, ঠিক তেননি বারোমাস অধীর আগ্রহ আর বইয়ের মাদকাসক্তির মত বসন্তের সংমিশ্রণে বৈরি হাওয়ার হাত ধরে প্রবেশ করে অমর একুশে বইমেলা। এটা নিশ্চয়ই আনন্দের, উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই। বিশেষ করে সকল সাহিত্যপ্রেমী নরনারী, নবীন-প্রবীন কবি,সাহিত্যিক,ছড়াকার, গল্পকার, নাট্যকার,ঔপন্যাসিকদের মনে অনুভূত হয় ঈদের আমেজ। আমিও তার ব্যতিক্রম নয়। খেয়ে না খেয়ে যেভাবেই হোক অফিস মেইনটেইন করে সপ্তাহে চারদিন বইমেলায় যাওয়ার চেষ্টা করেছি। বইমেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যনীয় বিষয় এবারের বইমেলা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটাই ব্যতিক্রম। আমাদের অনেকের মনেই একটা বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্ন কাজ করে। কোন লেখকের বই কত কপি বিক্রি হলো?
হিরো আলম, মোস্তাক তিশা,ডাক্তার সাবরিনা এদের বই কতকপি বিক্রি হলো। নাকি বিক্রি হলো না, এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর মত সময় নেই। কারণ
বইমেলা আমাকে এখন আর আপ্লুত করে না। এবারের মেলা সমাগমে মুখর ছিলো বটে, ছিলো কিছুটা উচ্ছ্বাসহীন গোমরামুখী । কবি, লেখদের মনে হয়েছে, কিছুটা যেনো হতাশার গ্লানি । তেমন প্রাপ্তি চোখে পড়ে নি কোথাও। কোনো বিশেষ বই বা লেখককে নিয়ে আলোচনা শুনিনি। আমিও বেশিরভাগ সময় আড্ডা দিয়েছি শিশু চত্বরে ৬৮৬ নং স্টলে। মেলার কিছুকিছু দৃশ্যপট আমাকে বিষিয়ে তুলেছে। মানুষ আর এখন মানুষ নেই। ভেবেছিলাম সাহিত্যের মত পবিত্র একটা স্থানে হিরো আলমের মত লোকের স্থান হবে না। হয়ওনিও । প্রথম দিন ঢুকেই দৌঁড়ানি খেয়েছে। আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো গণপিটুনিও খেতে পারতো। এটা আমার জন্য নয় শুধু গোটা বাংগালী সাহিত্য প্রেমী মানুষদের জন্য সুখবার্তা। অসাধু কিছু মিডিয়ার জন্য, কিছু ইউটিউবারের জন্য আজকে হিরো আলমের মতো মানুষও ভাইরাল হয় লেখক পরিচয়ে । মোস্তাক-তিশার পবিত্র বিবাহ সম্পর্ক মিডিয়াপাড়ায় আলোচনার শিরোনামে থাকে। প্রতিদিন মেতে থাকে ইউটিউবাররা ওঁদের নিয়ে। ভালো জিনিস নিয়ে কখনোই মাথা ঘামায়না। আমার মতে ওদের নিয়ে নাচানাচি না করে মেলা থেকে নতুন প্রজন্মের লেখকদের গুণগত মানের লেখা ও মেধাবী লেখক খুঁজে বের করুন। তাঁদের ভাইরাল করুন। মানুষ স্বস্তি পাবে। তরুণ সমাজ বইমুখী হবে। ছাত্র-ছাত্রী সাহিত্যের দিকে ঝুঁকে পড়বে। যে দেশে সাহিত্য চর্চা বেশি হয় সে দেশে কোন মাদকাসক্ত ব্যক্তি থাকতে পারেনা। সেই দেশে কখনো ধর্ষণের মত নিকৃষ্ট নোংরা কাজগুলো হতে পারেনা। পেছনের দিনগুলোতে দেখতাম শুধু সাধারণ বইপ্রেমী ক্রেতাদের ভীড়ে বইমেলা থমথমে থাকতো, আর এখন লেখকদের ভীড়ে বইমেলা থমথমে অবস্থা থাকে। এটাকে ইতিবাচক পরিবর্তন বলে অবশ্যই গণ্য করতে হবে। এটা কখনোই নেতিবাচক ভাবে দেখার সুযোগ নেই। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের নিকট শুধু আমার একটাই আবদার সরকারি উদ্যোগে হিরো আলম,মোস্তাক তিশার ভাইরাল পাপীদের অন্ততপক্ষে বইমেলায় জায়গা না দিয়ে সৃজনশীল লেখককে খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিন। তাদের বাংলা একাডেমি থেকে “বাংলা একাডেমি ক্ষুদে পুরস্কার” নামে পুরস্কারের উদ্যোগ নিন। এতে করে পাঠকসমাজ জেনে যাবে কোন লেখকের বই ভালো মানের। কোন লেখকের লেখা আগামীর দিনগুলোতে সাহিত্যের বাতিঘর হিসেবে প্রজ্বলিত হয়ে থাকবে। আমার দৃষ্টিতে আমি বাস্তবতা যা দেখলাম প্রকাশকগুলোও নিজের ব্যবসার কথা চিন্তা করে নারী লেখককে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। প্রকাশক জানে একজন নারী লেখিকার যেকোনো বিষয়ের ওপর বই বের হলেই মিনিমাম ২০০ কপি বই বিক্রি হবেই। আমি কিছু নারী লেখিকার মধ্যে একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি, তাদের সাথে যাদেরই ফেইসবুক বন্ধুত্ব আছে তাঁরাই সম্পর্ক টানাপোড়েন না ধরার জন্য বইমেলা গেলেই একটা বই সংগ্রহ করেছেন। এটা কোন সাহিত্য পাড়ার জন্য ইতিবাচক মনোভাব হতে পারে না। একটা বিভ্রান্তিকর বিষয়। অনেকে বাজে সমালোচনা করেন। তাঁদের এড়িয়ে চলেন। ফেইসবুক বন্ধু হলেই লেখার মান যাচাই-বাছাই না করে বই কিনতে হবে? আমি নিজেও বইয়ের গুণগত মান দেখে লেখিকাকে এড়িয়ে গেছি বরাবর। মূলত সত্যটি প্রকাশ করা হলো মনের ক্ষোভ থেকেই। কারণ অনেক ভালো পুরুষ লেখক আছে যাঁদের লেখা বাংলাদেশের নামি-দামি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো পান্ডুলিপি খুলেও দেখবেনা। অথচ তাঁরাই নারী লেখিকার লেখাগুলো দিব্যি প্রকাশ করে যাচ্ছে। এতেকরে ভালো লেখকদের দিনদিন হতাশাই কেবল বাড়ে। স্বস্তিতো আসতেই পারে না। এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর সময় আছে, এগুলো থেকে বেরিয়ে এসে আসুন শুদ্ধ সাহিত্য চর্চা করার চেষ্টা করি। একজন দক্ষ সমালোচকের মাধ্যমে খুঁজে বের করে আনি সাহিত্যের কোথায় ভুল ত্রুটি আছে। আমি মনে করি একশো জন লেখক গড়ার পাশাপাশি একজন সাহিত্য সমালোচক তৈরি করা বাঞ্ছনীয়। সমালোচনা বিষয়ে যদি বলি —
সমালোচনা’ শব্দটির অর্থ সম্যকরূপে আলোচনা। বলা বাহুল্য এ আলোচনা সাহিত্য সম্পর্কিত। এই সাহিত্য সমালোচনা সাহিত্য সৃষ্টির লগ্ন-পর্ব থেকেই যুক্ত। সঠিকভাবে বললে বলা যায় সাহিত্য সৃষ্টি ও সাহিত্য সমালোচনা একে অপরের সঙ্গে জড়িত। কোন সৃষ্টির প্রথম সমালোচক স্রষ্টা নিজে। স্রষ্টাকে সৃষ্টির দিব্য প্রেরণায় উদ্ভাসিত হয়ে থাকলেই হয় না, তাকে প্রকরণ সাজানোর মজদুরিও করতে হয়। সেই সাজানো-গোছানোর দক্ষতা দেখানোর জন্যই স্রষ্টাকে কঠোর সমালোচক হতে হয়। শিল্পী যদি এখানে গোপন ভাঙা-গড়ার উৎসাহ নিয়ে আত্মবীক্ষণাগারে না ঢোকেন, তাহলে সার্থক সাহিত্যিকের পদ কৌলীন্য লাভে অবশ্যই ব্যাঘাত ঘটবে। তাই নিজের ভাগ্যে নিজেই ‘দ্বিতীয় এক ধূম্রলোচন’ না হলেও সব সাহিত্যিকই একজন সমালোচক এবং তাঁর সৃষ্টির প্রথম সমালোচক। আদি কবি যদি বাল্মীকি হন, তাহলে তাঁর সৃষ্টির সেই প্রথম লগ্নে ‘কিমিদং’–এ কি সৃষ্টি করলেন এই প্রশ্ন ও সেই প্রশ্নের উত্তর তাঁকে আদি সমালোচকও করে তুলেছিল।
সমালোচনার উৎসমূলে সাহিত্য সৃষ্টি ও সেই সৃষ্টির ভালো-মন্দ বিচার থেকে সহজাত হলেও, পরবর্তীকালে সাহিত্য সমালোচনা বা সমালোচনা সাহিত্য সাহিত্যের এক বিশেষ শাখারূপেই পরিবর্ধিত হয়ে উঠেছে।
সমালোচক যথার্থভাবেই সৃষ্টি যজ্ঞের পুরোহিত। দেবতার নির্দেশ এবং অভিপ্রায়কে সাধারণের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য যেমন পুরোহিত তন্ত্রের সৃষ্টি, স্রষ্টাকে পাঠকের কাছে অন্তরঙ্গ করে তোলার জন্য তেমনিভাবে সমালোচনারও সৃষ্টি। এই পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় সমালোচক স্রষ্টার উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায়কে পাঠকের সম্মুখে প্রকাশ করেন, এই সঙ্গে পাঠকের বিপরীতে স্রষ্টাকেও পাঠকের আস্বাদন যোগ্যতা এবং রসরুচি সম্বন্ধে পরোক্ষে সচেতন করে তোলেন।
পাঠক সমাজের সঙ্গে সংযোগকারী সত্তা হিসেবে সৃষ্টির দল মোচনের জন্য সমালোচকের চাই পরিমিত ব্যাখ্যা ও সৃষ্টির নিগূঢ় মর্মের উদ্ঘাটন। সৃষ্টিকে কেন্দ্রস্থলে রেখে এই উভয়ের ভারসাম্য রক্ষাই প্রকৃত সমালোচকের কাজ। এর মধ্য দিয়েই সাহিত্যিক ও পাঠক উভয়কেই আদর্শ সমালোচক সচেতন করে তোলেন। এতগুলো কথা এইজন্যই বল্লাম, সাহিত্য মহলে বর্তমান সময়ে দক্ষ সমালোচকের বড়ই অভাব। আমরা সকলেই নিজেকে তুখোড় কথাসাহিত্যিক, কবি,গল্পকার, ছড়াকার মনে করি। কয়েকদিন আগে দেখলাম একটি মেয়েকে কোন একজন বয়োজ্যেষ্ঠ কবি মেয়েটিকে কবিতার জননী উপাধিতে ভূষিত করেছেন। এই পদবি, বা এই উপাধি কি জনপ্রিয় কবি,কুসুম কুমারী দাশ,সুফিয়া কামাল,বেগম রোকেয়া, সেলিনা হোসেন, রাবেয়া খাতুন, ঈত্যাদি কেউ কি পেয়েছিলেন? সেটা আমার মোটেও বোধগম্য নয়। আমার জিজ্ঞাসা থাকলো কি কি উপকরণ থাকলে তাকলে কবিতার জননী উপাধিতে ভূষিত করা যায়। আসলে সত্যকথা হলো আমরা কিছু পুরুষ জাতি এখনো নিজের চরিত্রকে শোধরাতে পারলাম না। নারী লেখিকাদের মাথায় তুল নাচার চরিত্রটা বাদ দিতে পারলাম না। কথাসাহিত্যিক ও কবিকে দেখতে হবে শৈল্পিকরুপে। লিংগ ভেদাভেদ দেখে নয়। মুখ অবয়ব সুন্দর হলেই তাঁকে বলতে হবে কেন, চমৎকার লিখেছেন। লেখার মান ভালো হোক আর খারাপ হোক। একজন নারী লেখিকার রুপের দিকটা না দেখে তাঁর সৃষ্টির গুণগান নিয়ে সঠিক বিচার বিশ্লেষণ করা শিখুন।
মা,বোন সকলের ঘরেই আছে। নিজের বোনের অথবা স্ত্রীর কথা চিন্তা করে পথ চলুন । আজকে যাকে নিয়ে আপনি মেতে থাকেন সে কারও না কারও স্ত্রী অথবা বোন। আপনার আজকের প্রশংসা ওঁর জন্য আগামীর দিনগুলো অন্ধকার। ভবিষ্যতে তাঁকে সাহিত্য মহলে টিকিয়ে রাখতে পারবে না। আমাদের একটাই স্লোগান হওয়া উচিত বলে মনে করি “আসুন বই পড়ি, আলোকিত দেশ গড়ি ”
——লেখক- মনিরুজ্জামান বাদল।
#বইমেলা #বাংলাএকাডেমি #বইপোকা

শেয়ার করুন

আরো পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
Theme Customized By BreakingNews